দলের কোন দায়িত্বে নেই। তাতে কি নিজেই একটি দলের মূল হোতা বনে গেছেন। দলের নাম প্রচার লীগ। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন এই দলের। কখনও পরিচয় দেন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে। প্রচার লীগের ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো তাকে। কিন্তু এতে থেমে থাকেননি তিনি। এই দলের প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে বেঈমানি করে এখন নিজেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। বৈধ কোন আয় নেই। কিন্তু থাকেন দামি ফ্ল্যাটে। চড়েন দামি গাড়ি। চাকরি, বদলি, মামলা এমন কোন কাজ নেই যা তার দ্বারা হয় না। এভাবেই নিজেকে জাহির করেন তিনি। মূলত তিনি একজন প্রতারক। প্রতারণা করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এই প্রতারকের নাম ইকবাল। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাধে ওই পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজধানীতে। এক্ষেত্রে শুধু সরকার দল আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করছেন তা না। বরং প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। কৌশলে নামের আগে যোগ করেছেন শেখ শব্দটি।
সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৬ই জুলাই প্রচার লীগ গঠন করা হয়। সংগঠনের আহবায়কের দায়িত্বে ছিলেন দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ আলম টিপু। যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন রফিকুল ইসলাম, শেখ আলী আশরাফ। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর শাখা গঠন করা হয়। এই শাখার সভাপতির দায়িত্ব পান ইকবাল। চতুর ইকবাল অল্প দিনের মধ্যেই প্রচার লীগের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি অফিসে তদবির বাণিজ্যে মেতে উঠেন। চাঁদাবাজি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের কারণে তার উপর ক্ষিপ্ত হন এই সংগঠনের অন্যান্যরা। তার অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রচার লীগের নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ হন ইকবাল। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই পুরো কমিটি নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন। নিজেকেই ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলেও ইকবাল রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বিষয়টি স্বীকার করে প্রচার লীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক শাহ আলম টিপু বলেন, তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। সংগঠন আমরা গঠন করেছিলাম সরকার ও আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার জন্য। কোন দুর্নীতি বা অনিয়ম করার জন্য না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ইকবাল নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইকবাল এখন ঢাকায় বিলাস বহুল একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। দামি একটি গাড়ি ব্যবহার করেন। সার্বক্ষণিক তিন জন ব্যক্তিগত স্টাফ তাকে তার সঙ্গে। ঘনঘন বিদেশ গমন করেন তিনি। প্রায়ই মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বেড়াতে যান ইকবাল। সূত্রমতে, ব্র্যাংক ব্যাংকের (একাউন্ট নম্বর হচ্ছে- ১৫০৫২০১০৪৬৫০৩০০১) একটি একাউন্টে বিপুল অঙ্কের টাকা রয়েছে তার। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে তার টাকা রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে নিজের কোন বৈধ আয় নেই ইকবালের।
সাংগঠনিকভাবেও তেমন কোন অবস্থান নেই তার। গ্রামে থাকাকালীন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিয়ে ফেল করেছিলন। কিন্তু ঢাকায় প্রচার লীগ ও শেখ পরিবারের পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন বিভিন্নস্থানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি তদবির থাকে ইকবালের। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ও শেখ পরিবারের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তিনি ধমকও দিয়ে থাকেন ওই কর্মকর্তাকে। ইকবালের কারণে শুধু এই কর্মকর্তা নয় বরং তার মতো সরকারি অনেক কর্মকর্তা ভয়ে তটস্থ থাকেন। নিজেকে সরকারের প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ট বুঝাতে বিভিন্ন মন্ত্রী, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি ধারণ করেন তিনি। পরবর্তীতে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে জানান দেন তাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। এসব পরিচয় দিয়েই তদবির বাণিজ্য চালাচ্ছেন ইকবাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল বলে, আমি প্রচার লীগের দায়িত্বে রয়েছি। তবে তা ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল, তদবির ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। নিজের আয়, বিলাস বহুল গাড়ি ও ঘনঘন বিদেশ যাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তিনি।
এদিকে, প্রচার লীগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে প্রচার লীগ বলে কোন সংগঠন নেই। অসৎ উদ্দেশে সুবিধা ভোগের জন্য অনেকে এসব ভূইঁফোড় এসব সংগঠন করেন। তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আহবান জানাচ্ছি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।